
ফাহাদ স্যার, অনলাইন শিক্ষাকে যিনি অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। যিনি মাঠে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীদের জন্য। তার পড়ানোর ধরণ অন্য শিক্ষকদের থেকে আলাদা। তিনি খুব সহজেই স্টুডেন্টদের বোঝিয়ে থাকেন। স্যারের জীবনী জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন
পুরো নাম মোহাম্মদ ফাহাদ হোসাইন। তবে সবাই তাকে ফাহাদ স্যার নামেই চিনে। ফাহাদ স্যারের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে রাজধানীর নারায়নগঞ্জ জেলায়। তবে তিনি এখন ঢাকার মিরপুরে থাকেন। তিনি MPH ডিগ্রি সম্পন্ন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "পাব্লিক হেলথ" এ।
তিনি একজন টিচার, মোটিভেটর এবং ট্রাভেলার। ক্লাসের মধ্যে ফাহাদ স্যারের বলা মোটিভেশনাল কথাগুলো শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগায়। কোঠা আন্দোলনে তিনি ছাত্রদের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "তোদের পাশে থাকবো না তো আমি কই থাকবো? তোমরা নাই মানে তো আমি অস্থিত্বহীন"। স্যারের এই কথাটি অনেক ছাত্রদের মনে অনুপ্রেরণা যোগিয়েছিলো।
ফাহাদ স্যার প্রথম পড়ানো শুরু করেছিলেন ২০০৪ সালে। তখন তিনি মাত্র ৪০০ টাকা মাসে বেতন পেতেন। তারপর তিনি বেশ কয়েকদিন অনলাইন শিক্ষা পরিষেবা প্রদানকারী প্লাটফর্ম "Edutube" এর সাথে যুক্ত ছিলেন।
ফাহাদ স্যার মানুষ ছিলেন স্বাধীনচেতা। নিজের কিছু করার ইচ্ছা তার। তাই তিনি ২০১৭ সালে "আমাদের স্কুল" প্রতিষ্টা করেছিলেন। বর্তমানে চেনেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। চেনেলটিতে বর্তমানে প্রায় ১১০০ এর অধিক শিক্ষামূলক ফ্রী কন্টেন্ট রয়েছে। যা দেখে ফাহাদ স্যারের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হচ্ছে।
ফাহাদ হোসাইন ২০২০ সালে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্টা করেছিলেন "ফাহাদস টিউটোরিয়াল" নামক আরেকটি লার্নিং প্লাটফর্ম। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই প্লাটফর্মেই বাংলা মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের জন্য ভিডিও আপলোড শুরু করেন। তখন থেকে "আমাদের স্কুল" প্লাটফর্মে আর কখনো ফাহাদ স্যারের ক্লাস আসতে দেখা যায়নি। বর্তমানে চেনেলটিতে ৮ লক্ষের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এবং ১৮০০ এর বেশী ফ্রী ক্লাস রয়েছে। ফাহাদস টিউটোরিয়াল এ বর্তমানে ১৫ জনেরও বেশী শিক্ষক কর্মরত আছেন।
২০২২ সালের প্রথম দিকে অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম "শিখো" তে জয়েন করেছিলেন ফাহাদ স্যার। তবে এর পরের বছর তিনি শিখো থেকে বিদায় নিয়েছিলেন নিজের প্লাটফর্ম 'ফাহাদস টিউটোরিয়াল" কে আরো উচ্চ শিখরে নেওয়ার উদ্দেশ্যে।
পড়ানোর পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ফাহাদ স্যার খুব ভালো। তিনি আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করেন। অন্যান্য শিক্ষা প্লাটফর্মগুলোর সাথেও খেলতে দেখা গেছে ফাহাদস টিউটোরিয়াল টিমকে। কখনো টেন মিনিট স্কুলের সাথে আবার কখনো বন্দি পাঠশালার সাথে খেলে থাকেন। ফাহাদ'স টিউটোরিয়াল টিমের খেলার আপডেটগুলো দেওয়ার জন্য ফেসবুকে আলাদা একটি পেজও আছে ফাহাদ স্যারের।
শারীরিকভাবেও ফাহাদ হোসাইন খুব ফিটফাট। তিনি প্রতিদিন ব্যায়াম করেন। শুক্রবারে তিনি ২০-২২ কিলোমিটার দৌড়ান। যা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন।
তিনি ২০১৮ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর বিবাহ করেন তাসমীয়া আজীম নীলা ম্যামকে। আরিশা নামের একটি ছোট মেয়েও আছে ফাহাদ স্যারের। অনেক সময় ক্লাসের ফাকে আরিশাকে নিয়ে আসেন। অনেকে স্যারকে একজন আদর্শ বাবা বলেও সম্মোধন করেন।
শুরুর দিকে অনেকগুলো সাবজেক্ট পড়ালেও বর্তমানে তিনি এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞান পড়ান। অন্যান্য বিষয়গুলো ২-৩ জন শিক্ষক পড়ালেও জীববিজ্ঞান বিষয়টি তিনি একাই পড়ান।
অনুপ্রেরণামূলক কথা বলার জন্য শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেক শ্রেণীর মানুষরা ফাহাদ স্যারকে পছন্দ করেন এবং স্যারের মোটিভেশনাল বক্তব্যগুলো শুনেন। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকরাও তাকে ফলো করেন।
ফাহাদ হোসাইন ঘুরাঘুরি করতে একটু বেশী পছন্দ করেন। কখনো পরিবারকে নিয়ে বা কখনো অফিসের বাকি শিক্ষকদের নিয়ে ঘুরে আসেন। নিজের ভ্রমণের সৃতিগুলো ধরে রাখতে তিনি আলাদা একটি চেনেলও বানিয়েছেন। চেনেলটিতে মোটভ্লগ করতেও দেখা গেছে স্যারকে।
ফাহাদ স্যারকে অনেকে মেজর ডালিমের সাথে তূলনা করে। আন্দোলনে পুলিশ তাকে তার অফিস থেকে গ্রেফতার করেছিলো। ফাহাদ স্যারের মোবাইল চেক করার সময় স্যারের বউ এর একটি পোস্ট পুলিশের নজরে পরে। সেখানে ফাহাদ স্যারের বউ ছাত্রদের পক্ষে পোস্ট করেছিলেন। তাই পুলিশ স্যারের বউকে উঠিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। তখন তিনি প্রয়োজনে পুলিশেরর সাথে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই তাকে অনেকে মেজর ডালিম ২ পয়েন্ট ও (২.০) বলেন।
0 Comments