
বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনে আলোচিত ও সমালোচিত এক নাম আসিফ মাহতাব। পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন তিনি। কোঠা আন্দোলনে তাকে অন্যায়ভাবে আটক করেছিলো পুলিশ। সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে 'শরীফ থেকে শরীফা' গল্পটি নিয়ে সমালোচনা করে সেই পাতা ছিঁড়ার কারণে চাকরি হারাতে হয়েছিলো তাকে। ভিডিও আকারে দেখতে নিচের প্লে বাটনে ক্লিক করুন
পুরো নাম আসিফ মাহতাব উৎস। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৫ সালের পহেলা জানুয়ারি তারিখে ঢাকার গোপালগঞ্জ জেলার একটি শিক্ষিত পরিবারে। তবে বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরায় থাকেন। তিনি ২০১০ সালে "ও" লেভেল এবং ২০১২ সালে "এ" লেভেল পাস করেন। তিনি ২০১৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে পড়ার সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে Political Science and Sociology বিভাগে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন তিনি। আসিফ মাহতাব ২০২০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি দর্শন এবং শিক্ষা বিষয়েও উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি তার গভীর আগ্রহ তাকে একজন নিবেদিত শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি শিক্ষা ও সমাজের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করেন। তরুণ প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আসিফ মাহতাবের বক্তৃতাগুলি বেশ জনপ্রিয়।
আসিফ মাহতাব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারে কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের সহকারী প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন। পরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত "শরীফ থেকে শরীফা" শিরোনামের একটি গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এই ঘটনার পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তার সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করে।
বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলনে প্রথম সারিতেই দেখা গেছে আসিফ মাহতাবকে। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে শাপলা চত্বরে ছিলেন তিনি। তারপর ২০১৫ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির হরতাল প্রটেস্টে ছিলেন তিনি। একই বছরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে "নো-ভ্যাট" আন্দোলনের অন্যতম সংঘটক ছিলেন আসিফ মাহতাব। তাছাড়া IUBAT Dress Protest, Protest Against Bashundhara সহ বিভিন্ন অন্যায়বিরোধী আন্দোলনে দেখা গেছে আসিফ মাহতাবকে। ২০১৮ সালের কোঠা আন্দোলনেও ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ট্রান্সজেন্ডার বিরোধী আন্দোলনে এবং সবশেষ ২০২৪ সালের কোঠা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন তিনি। তিনি মূলত সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে পছন্দ করেন।
বিভিন্ন সময়ে মানবতাবাদী কাজে যোগ দিয়েছেন আসিফ মাহতাব। ২০১৭ সালে দিনাজপুরের বন্যায় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ত্রাণ দিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে মিরপুর বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রান দিয়ে সহায়তা করেছেন আসিফ মাহতাব। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধ বিষয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষেও দাড়িয়েছিলেন আসিফ মাহতাব।
আসিফ মাহতাবের বয়স কম হলেও মেরুদন্ডের সমস্যার কারণে তিনি একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না৷ লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয় আসিফ মাহতাবের। এই অবস্থায়ও কোঠা আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার উপর মিথ্যা অভিযোগ করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পরবর্তীতে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আসিফ মাহতাব Don Sumdani Facilitation & Consultancy এ হেড অফ রিসার্চ হিসেবেও কাজ করেছেন ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। প্রতিষ্টানটি Don Sumdani নামক একজন বাংলাদেশী ইনফ্লুয়েন্সারের। Don Sumdani এর ৩ টি বইয়ে সহ-লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
আসিফ মাহতাব ইসলামী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। চীনের গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ২০১৬ সালে তিনি CGTN এর একটি ডকুমেন্টরীতে ইসলামিক এক্টিভিস্ট হিসেবে কথা বলেছিলেন তিনি। তাছাড়া Quora সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য লিখেন তিনি।
আসিফ মাহতাব একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি শিক্ষক এবং লেখক, যিনি শিক্ষা ও সমাজ নিয়ে তার ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন এবং তরুণদের জন্য শিক্ষামূলক বক্তৃতা প্রদান করেছেন। এছাড়া তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
আসিফ মাহতাবের জীবনের এই ঘটনাবলী আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আসিফ মাহতাব সম্পর্কে আপনার মতামত কী? কমেন্ট করে জানান।
0 Comments